ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে কিছু ইনোভেটিভ আইডিয়া

corruption

corruption

(১) একটি জাতীয় ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সকল তথ্য ইনপুট দেয়া থাকবে। দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের একটা NID (National Identification) Number থাকতে হবে। সমস্ত কিছু এই NID NO ভিত্তিক হতে হবে। একজন নাগরিকের সমস্ত Data এই NID এর সাথে লিংকড থাকবে।

(২) কোন একটা খাত ধরে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা কখনই সম্ভব নয়। করতে হলে করতে হবে In General । দূর্নীতি করে সম্পদ কোথায় নিয়ে গিয়ে রাখলো, আমাদের সেখানে গিয়ে ধরতে হবে।

(৩) বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নেওয়া হয়। কিন্তু এনআইডির সার্ভারের সাথে একাউন্টটি লিংক করা হয় না। এইটা অবশ্যই করতে হবে। শুধু তাই নয় একাউন্ট ওপেনিং ফরমে পিতা-মাতা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই-বোন ও নমিনীর নামের সহিত তাহাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরও নিতে হবে এবং এনআইডির সার্ভারের সাথে তা লিংকড করতে হবে। এতে করে পুরো সিস্টেমটা একটা Tree এর মতো হয়ে যাবে। ফলে দেশের যাবতীয় পরিসংখ্যানগত কাজ সহজ হয়ে যাবে। পুরো সিস্টেমটা একটা Tree এর মতো হয়ে গেলে দূর্নীতির টাকা নিজের নামে না রেখে অন্যের নামে রাখলেও তা সিস্টেমে ধরা পড়বে।

(৪) বর্তমানে যে কোন নাগরিক যেমন- ৫টি সিমের বেশী রাখতে পারে না, তেমনি ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও এরকম একটা আইন করে দিতে হবে যে, কোন এক নাগরিক ৫ টির বেশি একাউন্ট বাংলাদেশের মধ্যে খুলতে পারবে না। সকল সরকারী লেনদেন একটা নির্দিষ্ট একাউন্টে হতে হবে। একাউন্টসমূহের একটি জেনারেল নাম থাকবে। একটি ব্যাংকে একটি একাউন্টিই খোলা যাবে, তার বেশি নয় এবং উক্ত একাউন্ট দিয়ে সে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে লেনদেন করতে পারবে। প্রত্যেক ইউনিয়নে অন্ততঃ পক্ষে যে কোন ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপন করতে হবে এবং সমস্ত শাখা অনলাইন করতে হবে যাতে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে নাগরিকগণ লেনদেন করতে পারে। একাউন্টসমূহের জেনারেল নামের ক্ষেত্রে তার এনআইডি নম্বরের পরে ব্যাংকের নাম দিয়ে একাউন্ট খোলা যেতে পারে, যেমন মিস্টার x এর এনআইডি নম্বর যদি ৫০২৭১০৯৮৬২১৩৪ এতো হয়, তাহলে সোনালী ব্যাংকে তার একাউন্ট নম্বর হবে 5027109862134@Sonali । তেমনি অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খুললে তার নম্বর হবে 5027109862134@Agrani ।

(৬) দূর্নীতির অর্থ বা সম্পদ কোথায় নিয়ে রাখলো তার সাধারণ ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- ব্যাংক, শেয়ার/ডিভেঞ্চার, পোষ্ট অফিস, সঞ্চয় পত্র, ফিক্সড ডিপোজিট, জমি/বাড়ি/ফ্লাট, স্বর্ণ, যানবাহন কেনা। এসবগুলির সাথে এনআইডির সার্ভার লিংকড করতে হবে। ভূমি বা ফ্লাটের নামজারীর সময় তা এনআইডির সাথে লিংকড করতে হবে এবং এক লক্ষ টাকার উপরে যে কোন কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তার এনআইডির সাথে লিংকড করতে হবে।

(৭) বিভিন্ন সেবা সমূহের টাকা পরিশোধ অনলাইন ও মোবাইল ভিত্তিক হতে হবে। এ বিষয়ে উন্নত দেশের আইটিএস (Intelligent transportation systems) এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। উন্নত দেশে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যানবাহন সমূহের নম্বর প্লেট স্ক্যান করা হয়। কেহ ট্রাফিক আইন ভংগ করলে উক্ত নম্বর প্লেটের নম্বর সংগ্রহ করা হয়। উক্ত নম্বর আবার এনআইডির সহিত লিংকড, ইহা হইতে তাহার পরিচয় বের করা হয়। ট্রাফিক আইন ভংগ করার দরুন জরিমানা সমূহ প্রদানের জন্য তাহার মোবাইলে এসএমএস ও ই-মেইলে ম্যাসেজ যায়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করিলে তার কাছে সতর্কীকরণ এসএমএস ও ই-মেইল যায়। তারপরও না পরিশোধ করিলে জরিমানার টাকা তার ব্যাংক একাউন্ট/ক্রেডিট কার্ড থেকে কেটে রাখা হয়। বাংলাদেশেও উক্ত সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। সকল সরকারী লেনদেন একটা নির্দিষ্ট একাউন্টে হতে হবে। সমস্ত বেতন ভাতা, পেনশনারদের ভাতা, নাগরিকদের বিভিন্ন ভাতা, বিভিন্ন সেবা সমূহের টাকা পরিশোধ ইত্যাদি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন কর পরিশোধ করতে উক্ত সাধারণ একাউন্টের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

(৮) সমস্ত বেতন ও ভাতা, পেনশনারদের ভাতা, নাগরিকদের বিভিন্ন ভাতা, বিভিন্ন সেবা সমূহের টাকা পরিশোধ ইত্যাদি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন কর পরিশোধ করতে সাধারণ নাগরিকদের সময়, পরিশ্রম ও ক্ষেত্র বিশেষে উৎকোচও দিতে হয়। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বিল, ভূমি কর থেকে শুরু করে সরকারের সমস্ত কর, আরোপিত জরিমানা, বেতন ভাতা থেকে শুরু করে সমস্ত ভাতা ও সেবা সমূহ অনলাইন ও মোবাইল ভিত্তিক করা হলে মানুষ ঘরে বসে কম সময়ে, কম পরিশ্রমে ও ভোগান্তি ছাড়াই সেবা সমূহ গ্রহণ করতে পারবে এবং এগুলো ঘিরে বিভিন্ন সংস্থায় যেসব দূর্নীতি হয় তাও বহুলাংশে কমে যাবে।

(৯) এনআইডির সার্ভারের সহিত এনবিআর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্টানসমূহের লিংকড থাকলে কেহই অপ্রদর্শিত অর্থ রাখতে পারবে না। রাখলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাক্স কেটে রাখা যাবে ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। কর ফাকি দিতে পারবে না কেও তখন। ট্যাক্র রির্টান এ কি দেখালো আর কি দেখালো না তা সহজেই বের করা যাবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায় বহুগুনে বেড়ে যাবে। কমে যাবে আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা। আমরা নিজেরাই বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারবো। দেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে, গড়ে উঠবে সোনার বাংলাদেশ।

সর্বোপরি দূর্নীতি প্রতিরোধ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ প্রসংগে আমি শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। স্যার আপনি এবং আপনার ছাত্রসমূহের দ্বারা এমন একটি সফটওয়ার/সিস্টেম প্রস্ত্তত করুন দেশের জন্য।

লিখেছেনঃ মোঃ সারোয়ার জাহান সুজন
ই-মেইলঃ [email protected]
ওয়েব সাইট: www.sujanbasicneeds.weebly.com

পাঠকের মতামত: